শাফা'আত আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ কোনো কিছু জোড় সংখ্যক হওয়া, কারও জন্য সুপারিশ করা, অনুরোধ করা, মধ্যস্থতা করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় শেষ বিচারের দিন ক্ষমা ও কল্যান লাভের জন্য মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবি-রাসুলগণ, ফেরেশতাগণ ও পুণ্যবান বান্দাগণ কর্তৃক মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করাকে শাফা'আত বলে।
জোড়ায় আলোচনা | ||
ক্ষেত্রসমূহ | যেসব ভালো কাজ করবো | যেসব মন্দ কাজ পরিহার করবো |
ব্যক্তিগত জীবনে | কুরআন তিলাওয়াত | রোযা ভঙ্গ করবো না |
পরিবারে | ||
বিদ্যালয়ে | ||
সমাজে |
শাফা'আতের তাৎপর্য
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা সকলের কৃতকর্মের হিসাব নিবেন। তখন আমল অনুযায়ী পুণ্যবানদের জন্য জান্নাত আর পাপীদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করা হবে। মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবি-রাসুলগণ এবং আউলিয়ায়ে কেরামগণ আল্লাহর কাছে পাপীদের পাপ মার্জনার জন্য শাফা আত করবেন। তখন পাপীরা জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে জান্নাতে যাবার সৌভাগ্য লাভ করবে। আর পুণ্যবানদের জন্য শাফা'আত করার কারণে জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
হাশরের ময়দানের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। সকল মানুষ খুবই পিপাসার্ত হবে এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকবে। তারা নিজেদের পরিণতি নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকবে। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ নবি- রাসুলগণ ও পুন্যবান বান্দাগণকে শাফা'আত করার বিশেষ অনুমতি দিবেন।
কুরআান ও হাদিসে শাফা'আত
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম শাফা'আত করার অনুমতি পাবেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। পবিত্র কুরআনে শাফা'আত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন,
لَا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
অর্থ: 'যে পরম দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ করবার ক্ষমতা থাকবে না।' (সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮৭)
তিনি অন্যত্র আরো বলেছেন,
وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
অর্থ: 'যাকে অনুমতি দেওয়া হয় সে ব্যতীত আল্লাহর নিকট কারো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না। (সূরা সাবা, আয়াত: ২৩)
এছাড়া বিভিন্ন আয়াতে কাফির-মুশরিকদের জন্য কিয়ামতের দিন কোনো শাফা'আত থাকবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা কিয়ামতের ময়দানে অসহায় হয়ে পড়বে।
মহানবি (সা.)- এর হাদিসেও শাফা'আতের কথা এসেছে। তিনি বলেছেন, 'পৃথিবীতে যত ইট পাথর আছে, আমি তার চেয়েও বেশি মানুষের জন্য কিয়ামতের দিন শাফা'আত করবো।' (মুসনাদে আহমদ)
আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন
أُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ
অর্থ: 'আমাকে শাফা'আত (করার অধিকার) দেওয়া হয়েছে।' (বুখারি ও মুসলিম)
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বাণীর আলোকে এটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, কিয়ামতের দিন চরম ভয়াবহ মুহূর্তে নবি-রাসুল, ফেরেশতা, শহিদ, আলিম, হাফিজে কুরআন ও পুণ্যবান বান্দাগণ মহান আল্লাহর দরবারে শাফা'আত করার অনুমতি লাভ করবেন। আল্লাহ তা'আলা এসব শাফা আত কবুল করবেন এবং অসংখ্য মানুষকে জান্নাত দিবেন। তবে মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরে শাফা'আত করার অধিকার দেওয়া হবে।
শাফা'জাত-এর বিভিন্ন পর্যায়
শাফা'আত সম্পর্কিত হাদিসসমূহ বিশ্লেষণ করলে আমরা শাফা' আত-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কথা জানতে পারি। যথা-
ক. কিয়ামতের দিন সবাই যখন হিসাবের জন্য হাশরের ময়দানে একত্রিত হবেন, তখন এক অসহনীয় পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে। সূর্য থাকবে খুবই নিকটে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না। এ অবস্থায় মানুষ পর্যায়ক্রমে আদম (আ.), হযরত নূহ (আ.), হযরত ইবরাহিম (আ.), হযরত মুসা (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-এর কাছে এসে হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে শাফা'আত করতে অনুরোধ করবে। কিন্তু তাঁরা সবাই অপারগতা প্রকাশ করবেন। সবশেষে তারা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)- এর কাছে আসবে। তখন তিনি মহান আল্লাহর কাছে সমগ্র সৃষ্টি জগতের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য শাফা'আত করবেন। একে বলা হয় শাফা'আতে কুবরা।
খ. হিসাব-নিকাশের পর যেসব মুমিন জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হবে, তাদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি প্রদানের জন্য মহানবি (সা.) মহান আল্লাহর কাছে শাফা'আত করবেন। তাঁর জন্যই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে।
গ. বিনা হিসাবে জান্নাত দানের শাফা'আত। এ শাফা'আতে উম্মতে মুহাম্মাদির বিপুল সংখ্যক লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ শাফা'আতও কেবল মহানবি (সা.) এর জন্য নির্দিষ্ট।
ঘ. যেসব মুমিন পাপের জন্য জাহান্নামের উপযুক্ত হবে, তাদের ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য মহানবি (সা.) শাফা'আত করবেন।
ঙ . যেসব মুমিন পাপের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তিদানের জন্য মহানবি (সা.) শাফা' আত করবেন।
চ. যেসব মুমিন জান্নাতবাসী হয়েছেন, জান্নাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফা'আত। এ শাফা'আত অন্যান্য নবি-রাসুল ও আউলিয়ায়ে কেরামও করবেন।
ছ একদল মানুষ পাপ-পুণ্য সমান হওয়ায় আ'রাফে অবস্থান করবে। আরাফ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি উঁচু স্থান। মহানবি (সা.) তাঁদের জন্যও শাফা'আত করবেন। তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিবেন।
জ. কিয়ামতের দিন আল-কুরআন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য এবং সাওম পালনকারীদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শাফা'আত করবে বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
শাফা'আত মহান আল্লাহর দেওয়া একটি বিশেষ নিয়ামত। আমরা প্রিয় নবি (সা.)-এর শাফা'আতে বিশ্বাস করবো। তাঁকে ভালোবাসবো এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে জীবন গড়বো। তাহলে আমরা পরকালে মহানবি (সা.) এর শাফা'আত লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। কারণ তাঁর শাফা'আত ছাড়া আমাদের পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করা সম্ভব হবে না।
আরও দেখুন...